সোমবার, ডিসেম্বর ১, ২০২৫
১৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে ঘিরে জুলাই-আগস্টে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে ফাঁসির দড়িতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড প্রদান করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। একই অপরাধের মামলায় রাজসাক্ষী সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনের সর্বোচ্চ সাজা কমিয়ে ৫ বছর কারাদন্ড দিয়েছে । এছাড়া শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের সব সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্য বিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল -১ সোমবার এ আদেশ প্রদান করেছেন। গণ-অভ্যুত্থানের সময় হত্যাকান্ডসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে করা এটিই প্রথম মামলার রায়। যা হলো সোমবার।

ছবি – সংগৃহীত

রায় ঘোষণার সময় জনাকীর্ণ আদালতে আইনজীবীরা ছাড়াও জুলাই-আগস্টে নিহতদের কয়েকজনের পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। রায়ে বলা হয়, ‘আমরা ঐক্যমতের ভিত্তিতে এই মত দিচ্ছি যে, তাঁরা জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় নির্বিচারে ও নৃশংসভাবে মানুষ হত্যা করে যে ঘৃণিত অপরাধ করেছে, তাতে সর্বোচ্চ শাস্তি না দিলে দিলে ন্যায়বিচার নিশ্চিত হবে না।’ আদালত বলেছেন, ‘শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির অপরাধ প্রমাণিত হয়েছে। ৫টি অভিযোগের মধ্যে ৩টি অভিযোগে (২,৩,৪) শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয়েছে। অন্য দুইটি (১,৫)অভিযোগে তাকে আমৃত্যু কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে সবকয়টি অভিযোগে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয়েছে। ‘ আদালত আরও জানিয়েছেন, সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দায় স্বীকার করে রাজসাক্ষী হয়েছিলেন। সেজন্য ট্রাইব্যুনাল তাকে লঘুদন্ড হিসেবে ৫ বছরের কারাদন্ড দিয়েছে।

ছবি – সংগৃহীত

রায়কে ঘিরে আদালত অঙ্গনে নেয়া হয় কঠোর নিরাপত্তা। রায় ঘোষনার পর আইন উপদেষ্টা বলেছেন , শেখ হাসিনাকে দেশে আনতে ভারতের কাছে আবারও চিঠি লিখব । অন্যদিকে এ্যাটর্নি জেনারেল বলেছেন , এ রায় যুগান্তকারী , দেশে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা হয়েছে। চীফ প্রসিকিউটর বলেছেন , এ রায় প্রতিশোধ নয়, ন্যায়বিচারের প্রতিজ্ঞা।২ ঘণ্টা ১০ মিনিটের সংক্ষিপ্ত রায় পড়া শেষে দুপুর ২টা ৫০ মিনিটে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের বিরুদ্ধে এ রায় ঘোষণা করেন ট্রাইব্যুনাল। এর আগে ১১টায় ট্রাইব্যুনাল বসার কথা থাকলেও বেলা সাড়ে ১২টার দিকে ট্রাইব্যুনাল বসে। ট্রাইব্যুনাল বসেই প্রথম দুটি পৃথক মামলার আদেশ প্রদান করেন। এর পর মুল রায় প্রদানের আনুষ্টানিকতা শুর হয়। ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশন পক্ষে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলামসহ অন্যান্য প্রসিকিউটর উপস্থিত ছিলেন। অন্যদিকে পলাতক আসামিদের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন আইনজীবী মো. আমির হোসেন।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চব্বিশের জুলাই-আগস্টে সংঘটিত গণহত্যার দায়ে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালকে ফাঁসির দড়িতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড কার্যকরের নির্দেশ দিয়েছে। একই সঙ্গে দোষ স্বীকার করে রাজসাক্ষী হয়ে ট্রাইব্যুনালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে ৫ বছরের কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে।
সোমবার দুপুর ১২টা ৪০ মিনিটের দিকে ছয় অধ্যায়ে ৪৫৩ পৃষ্ঠার রায়ের প্রথম অংশ পড়া শুরু করেন বিচারিক প্যানেলের সদস্য বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী। অপর সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ।মূল রায় ঘোষণা করেন বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদার। আনুষ্ঠানিক অভিযোগ-১ তথা উসকানি, মারণাস্ত্র, ড্রোন, হেলিকপ্টার ব্যবহারের নির্দেশসহ আবু সাঈদ হত্যাকান্ডের দায়ে শেখ হাসিনাকে আমৃত্যু কারাদন্ড দেওয়া হয়। একইসঙ্গে চানখারপুলে ছয় হত্যা ও আশুলিয়ায় ছয় লাশ পোড়ানোর দায়ে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ-২ এ শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদন্ড দেন ট্রাইব্যুনাল। এছাড়া আনুষ্ঠানিক অভিযোগ-২ বা চানখারপুলে ছয় হত্যা ও আশুলিয়ায় ছয় লাশ পোড়ানোর দায়ে আসাদুজ্জামান খাঁন কামালকে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয়। রাজসাক্ষী হয়ে জবানবন্দি দেওয়ায় মামুনের পাঁচ বছরের কারাদন্ড দেওয়া হয়। তিনিও একই অপরাধে অপরাধী। তবে স্বেচ্ছায় ও সত্য বলায় তার প্রতি নমনীয় হন ট্রাইব্যুনাল।
এ মামলায় পলাতক রয়েছেন শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামাল। আর গ্রেপ্তার হয়ে প্রায় বছরখানেক ধরে কারাগারে রয়েছেন সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। তিনি রাজসাক্ষী হয়ে ট্রাইব্যুনালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছেন। ফলে সাবেক এই আইজিপির শাস্তির বিষয়ে ট্রাইব্যুনালের ওপর ছেড়ে দেন প্রসিকিউশন। ট্রাইব্যুনাল তাকে ৫ বছরের কারদন্ড দেন।
তিন আসামির বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ আনে প্রসিকিউশন। এর মধ্যে রয়েছে উসকানি, মারণাস্ত্র ব্যবহার, আবু সাঈদ হত্যা, চানখারপুলে হত্যা ও আশুলিয়ায় লাশ পোড়ানো। আনুষ্ঠানিক অভিযোগ মোট আট হাজার ৭৪৭ পৃষ্ঠার। এর মধ্যে তথ্যসূত্র দুই হাজার ১৮ পৃষ্ঠার, জব্দতালিকা ও দালিলিক প্রমাণাদি চার হাজার পাঁচ পৃষ্ঠার ও শহীদদের তালিকার বিবরণ দুই হাজার ৭২৪ পৃষ্ঠার। সাক্ষী করা হয়েছে ৮৪ জনকে। গত ১২ মে চিফ প্রসিকিউটরের কাছে এ মামলার প্রতিবেদন জমা দেয় ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। সোমবার সকাল ৯টা ১০ মিনিটের পর কড়া নিরাপত্তায় কারাগার থেকে প্রিজনভ্যানে করে সাবেক আইজিপি মামুনকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করে পুলিশ। অনেকটা মাথা নিচু করে ট্রাইব্যুনালের হাজতখানায় ঢোকেন তিনি।

Leave A Reply

Exit mobile version