সোমবার, ডিসেম্বর ১, ২০২৫
১৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে মাদক ও মানব পাচার, অপহরণ এবং মুক্তিপণ বাণিজ্য বন্ধে সবসময় সক্রিয় ও দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। অদ্য ১৭ নভেম্বর ২০২৫ তারিখে, টেকনাফ ব্যাটালিয়ন (২ বিজিবি) এর বিশেষ অভিযান দল সাবরাং এলাকার গোপন আস্তানায় অভিযান চালিয়ে মানব পাচারকারী চক্রের হাতে বন্দি অসংখ্য ভুক্তভোগীকেঅক্ষত অবস্থায় উদ্ধার এবং কয়েকজন পাচারকারীকে আটক করেছে। এই সমন্বিত, দ্রুত ও কার্যকরী অভিযান মানবপাচারকারীদের অশুভ উদ্দেশ্য বানচালের পাশাপাশি বেশকিছু ভুক্তভোগীদেরকে অনিশ্চিত ও ঝুঁকিপূর্ণ জীবনসংহারি সমুদ্রযাত্রা থেকে তাৎক্ষণিকভাবে রক্ষা করেছে, যা সীমান্ত এলাকায় মানবপাচার প্রতিরোধে বিজিবির অঙ্গীকার ও দক্ষতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

মানব পাচার প্রতিরোধে সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্রগুলোর বিরুদ্ধে বেশ কিছুদিন যাবত টেকনাফ ব্যাটেলিয়ন ধারাবাহিকভাবে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে আসছে। এসকল অভিযানে, উদ্ধারকৃত ভুক্তভোগীদের বয়ান এবং আটক আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদসহ নিজস্ব গোয়েন্দাদের তদন্তের মাধ্যমে মানব পাচারকারী চক্রগুলোর তৎপরতা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পায় ২ বিজিবি। সর্বশেষ, প্রাপ্ত গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানা যায় যে, সাবরাং ইউনিয়নের পানছড়ি এলাকার মৃত আফাজ উদ্দিনের পুত্র আব্দুল মোতালেব প্রকাশ “কালা বদ্দার” বসতঘরে মানব পাচারকারীরা বিদেশ গমনেচ্ছুক বেশ কয়েকজনকে আটকে রেখেছে। খবর পাওয়ামাত্রই অধিনায়কের নেতৃত্বে মানব পাচারকারীদের গ্রেফতারের জন্য ২ বিজিবি একটি বিশেষ অভিযান চালায়। পরিকল্পনা অনুযায়ী, গভীর রাতে আনুমানিক ০৩২০ ঘটিকায় সাবরাং ইউনিয়নের পূর্ব-দক্ষিণ দিকে অবস্থিত পানছড়ি এলাকার পাচারকারীদের সন্দেহজনক বাড়িকে ঘিরে ফেলা হয়। এ সময় বিজিবি সদস্যদের উপস্থিতি টের পেয়ে পাচারকারী চক্রের কয়েকজন রাতের আঁধারে সুকৌশলে পালিয়ে যায়। তবে, আভিযান দল ০৪ জন মানবপাচারকারীকে আটক করতে সক্ষম হয়েছে এবং তল্লাশী করে ০৮ জন ভুক্তভোগী (মহিলা-০৬, শিশু-০২) কে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।

*ধৃত আসামিদের বিস্তারিত ঠিকানা নিম্নরূপঃ*
ক। আসমা (১৯), পিতা-আফাজ উদ্দিন, মাতা–সাহারা খাতুন।
খ। শাবনূর (২০), পিতা-আব্দুল মোতালেব, মাতা–সাহারা খাতুন।
গ। জহুরা (৪৩), পিতা-মৃত আফাজ উদ্দিন, স্বামী–নুরুল হাজিম।
ঘ। সাহারা খাতুন (৬২), স্বামী – মৃত আফাজ উদ্দিন।
সকলের ঠিকানা: সাং-সাবরাং (পানছাড়ি পাড়া), ৪ নম্বর ওয়ার্ড, পোস্ট–সাবরাং বাজার, থানা–টেকনাফ, জেলা–কক্সবাজার।

*পলাতক আসামীর বিস্তারিত ঠিকানা নিম্নরূপঃ*
ক। আব্দুল মোতালেব ওরফে কালা বদ্দা (৩০)।
ঠিকানা: সাং-সাবরাং (পানছাড়ি পাড়া), ৪ নম্বর ওয়ার্ড, পোস্ট–সাবরাং বাজার, থানা–টেকনাফ, জেলা–কক্সবাজার।

৩। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ভুক্তভোগীরা জানায়, অপরাধীদের কয়েকজন দোসর তাদেরকে বিভিন্ন প্রলোভন প্রদর্শন করেছে। যার মধ্যে রয়েছে উচ্চ বেতনের চাকরি, সুবিধাজনক কর্মসংস্থান, দ্রুত ধনী হওয়ার স্বপ্ন, অল্প খরচে বিদেশ যাত্রা এবং বিনা অর্থে বিদেশ গমন ও পরবর্তীতে চাকরির বেতনে বকেয়া পরিশোধের সুযোগ ইত্যাদি। এ ধরনের লোভনীয় প্রস্তাবের মাধ্যমে বিভিন্ন এলাকা থেকে ভুক্তভোগীদেরকে প্রতারণার জালে ফেলে মাথাপিছু অর্থের বিনিময়ে পাচারকারী চক্রের কাছে বিক্রি করে দেয়। অপরদিকে, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটককৃত আসামীরা জানায়, সম্প্রতি মানব পাচারকারীদের বিরুদ্ধে পাহাড়ে বিজিবি’র একের পরে এক সফল অভিযানের ফলে সংঘবদ্ধ চক্রটি পাহাড়ের পরিবর্তে লোকালয় দিয়ে বিদেশে গমনেচ্ছুকদের পাচার করছে। এছাড়াও, মানবপাচারকারী ভয়াল চক্র সম্পর্কে বেশ কিছু মূল্যবান তথ্য পাওয়া গেছে যা অপরাধী চক্রেগুলোর বিরুদ্ধে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের চলমান আভিযানকে বিশেষভাবে ত্বরান্বিত করবে বলে আশা করা যায়। বর্তমানে, বিশেষ অভিযানে গ্রেপ্তারকৃত আসামীদের বিরুদ্ধে প্রচলিত আইন অনুসারে স্থানীয় থানায় মামলা রুজুসহ তাদেরকে হস্তান্তর করার কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।

টেকনাফ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক, লেঃ কর্নেল আশিকুর রহমান, পিএসসি বলেন, “আজকের রাতটি টেকনাফ সীমান্তে মানব পাচারকারী ও সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্রগুলোর জন্য একটি চরম দুঃসংবাদ। মানব পাচার বিরোধী সফল অভিযানগুলোই বিজিবির দৃঢ় অবস্থানের স্পষ্ট বার্তা যে, সকল অপরাধীদের জন্য টেকনাফ সীমান্তের পাহাড় থেকে সমুদ্রের জলসীমা পর্যন্ত এক ইঞ্চি জায়গাও নিরাপদ নয়। মানবতা বিরোধী এ ধরনের জঘন্য অপরাধ দমনে আমাদের এই ধারাবাহিক ও কঠোর নজরদারি এবং সাঁড়াশি অভিযান অব্যাহত থাকবে।”

উদ্ধারকৃত ০৮ জন ভুক্তভোগীই বিভিন্ন এফডিএমএন ক্যাম্পের কার্ডধারী সদস্য এবং তাদেরকে প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক প্রক্রিয়া শেষে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট হস্তান্তর করা হবে। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ দেশের সীমান্ত সুরক্ষা, জননিরাপত্তা এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় সর্বদা বদ্ধপরিকর।

Leave A Reply

Exit mobile version